ঢাকামঙ্গলবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইসলাম
  3. কিশোরগঞ্জ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. বিনোদন
  7. রাজনীতি
  8. শিক্ষাঙ্গন
  9. শোক সংবাদ
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অবশেষে পরিচয়

ডেস্ক এডিটর
ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

অবশেষে পরিচয়

—————————
তখন একটু একটু শীত চারিদিকে ঘন কুয়াশায় মোড়ানো পরিবেশ পরিস্থিতি, রাতের ঘোর অন্ধকার রেডিওতে প্রচার হচ্ছে এই দেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষন।
কুসুমপুর গ্রামের সাধারণ মধ্যবিত্ত গরীব কৃষক জমির মোল্লা সিদ্ধান্ত নিল যুদ্ধে যাওয়ার। যেই কথা সেই কাজ,
তৎক্ষনাৎ জমির মোল্লা তার স্ত্রী আমিনা কে বলল, ওগো, শোন আমি যুদ্ধে যাব আমাকে দোয়া করো এবং বিদায় দাও।
আমিনা বলে তুমি চলে যাবে এদিকে গ্রামের চারপাশে পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য এসেছে তারা বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প তৈরি করছে। আমি কিভাবে থাকবো খুব ভয় হচ্ছে। জমির বলে সবকিছুর মালিক আল্লাহ, তাই দেখবে তুমি শুধু আমার সন্তান দুটোকে দেখে রাখবে।
এই কথা বলে রাতেই জমির মোল্লা গ্রাম ত্যাগ করল এবং যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করলো। শুরু হলো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
দেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। চারিদিকে গুলির শব্দ। পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া কোন পথ নেই। কৌশলে আমিনা তার দুই ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে জীবন চালাচ্ছে।
জমির মোল্লার দুই পুত্র আকবর ও বিজয় কে নিয়ে আমিনা অতি কষ্টে বেঁচে যাচ্ছে। আর এইভাবে নয় মাস কেটে গেল, দেশ পেল স্বাধীনতা, ফিরে আসলো মহান নেতা। কিন্তু জমির মোল্লা আজও ফিরে আসেনি…..
তাই সাহস না হারিয়ে মনোবল শক্ত করে সন্তানদের নিয়ে কাজে নেমে পড়ল আমিনা।
আকবরকে বাজারের দোকানে রাখলো আর বিজয়কে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করালো। শুরু হলো আমিনার দুঃখের সংসার।  বিজয় মেট্রিক পাশ দিল তারপর লেখাপড়ার জন্য শহরে পাড়ি জমালো।
শহরে লেখাপড়ার একপর্যায়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্রেন বা স্মৃতি শক্তি হারায় বিজয়, তারপর সব কিছু ভুলে যায়। শুধু বাবার সেই রাতের যুদ্ধে যাওয়ার কথা এখনো মনে পড়ে।
ওদিকে বড় ছেলে আকবরকে বিয়ে করালো আমিনা।তার ঘরে জম্ম নেয় সুন্দর একটি ছেলে। নাম রাখে জয়,  বয়স প্রায় ছয় বছর হলো গ্রামের স্কুলে ভর্তি করালো জয়কে।
জয় এখন ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র। শিক্ষক বলল, আগামীকাল মহান বিজয় দিবস পালন করা হবে। স্কুলে গান হবে, কবিতা আবৃতি এবং ক্রীড়া অনুষ্ঠান হবে। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কৃত করবেন পুলিশ সুপার মহোদয় ।
জয় আগেই গল্প শুনেছে দাদির কাছে যে তার দাদা জমির মোল্লা একজন মুক্তিযোদ্ধা তাই জয়ের মনে অনেক আনন্দ। বাড়ী গিয়ে পরদিন দাদিসহ স্কুলে চলে আসলো এবং দিনভর মঞ্চের সামনে মাটিতে বসে অনুষ্ঠান দেখলো। শুরু হলো মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কার দেবার পালা। তার আগে পুলিশ সুপার মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা বলছে।
সবার নাম বলে কিন্তু জমির মোল্লার নাম আর বলে না।
তখন ৪র্থ শ্রেনির ছাত্র ” জয় ” দাঁড়িয়ে বলে স্যার আমার দাদা জমির মোল্লার নাম কই? আমার দাদা একজন মুক্তি যোদ্ধা এই গ্রামের সকল মানুষ জানে আমার দাদা যুদ্ধ করেছে। লাল সবুজ পতাকা অর্জনে আমার দাদার অবদান আছে।
ছেলেটির কথা শুনে পুলিশ সুপার তাকে মঞ্চে ডেকে নেয় এবং অবাক হয়ে ছেলেটির সব কথা শুনে এক পর্যায়ে বলে আমার দাদি বলেছে আমার দাদা রাতের অন্ধকারে যুদ্ধে চলে গেছে।
আরও বলে আমার বাবা আকবর এবং চাচা বিজয়কে দাদির কাছে রেখে যায়। দেশ স্বাধীন হলো বাংলায় বিজয়ের পতাকা উড়লো সবাই ফিরে এলো কিন্তু দাদা আর ফিরে এলো না। এখনো দাদি কাঁদে নিরবে————
এসব কিছু শুনার পর পুলিশ সুপার বিজয়ের তার অতীত সবকথা মনে পড়ে যায় আর চোখের জল ফেলে , মঞ্চ থেকে নেমে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তার দুঃখীনি মা আমিনাকে।
শেষে মাইকে ঘোষণা করে প্রিয় এলাকাবাসী শুনুন জমির মোল্লা আমার বাবা, আকবর আমার বড় ভাই, ছোট শিশু  জয় আমার ভাতিজা তার দূর্দান্ত সাহসের মধ্যেই আমি আমার পরিচয় অবশেষে ফিরে পেলাম।
আমি এই গ্রামের সন্তান। আমার বাবা জমির মোল্লা সত্যিকারের একজন ন্যায় নিষ্ঠাবান দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া  মুক্তিযোদ্ধা।।
সোহরাব হোসেন
লেখক ও শিক্ষক
সারিয়াকান্দি, বগুড়া।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।