ঢাকাসোমবার , ১৬ জানুয়ারি ২০২৩
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইসলাম
  3. কিশোরগঞ্জ
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. বিনোদন
  7. রাজনীতি
  8. শিক্ষাঙ্গন
  9. শোক সংবাদ
  10. সারাদেশ
  11. সাহিত্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ছোট গল্প: বেনামি চিঠি

ডেস্ক এডিটর
জানুয়ারি ১৬, ২০২৩ ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করিয়া আমি আপনার তরে একটি ভালবাসার পত্র নিবেদন করিতেছি।

আপনি জানেন আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি এবং খুব ভালোবাসি।
আমার ভালোবাসার মূল্যায়ন আপনার কাছে কতটুকু আমি তাহা টাহর করিতে পারিতেছি না।
আমি যে আপনাকে ভীষণ রকমের ভালোবাসি তার একটি বড় প্রমাণ হলো বার-বার আপনার দু’টি বড় বড় চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা।

মাননীয়া,
আপনার পরনে থাকা নীল শাড়িটার কথা বহুবার বলেছি।আপনি এই শাড়িটা পরলে মনে হয় কোন অপ্সরী আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
মনে মনে ভাবতে পারেন আমার চক্ষু দু’টি আপনাকে এতভাবে অবজার্ভেশন কেন করে?
মাননীয়া নত স্বরে ভালোবাসার মিষ্টি মিশ্রিত হাসির মাধ্যমে বলতে চাই এটা আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা।

কিছু না বলিয়া আমার সামনে দিয়া প্রতিদিন যখন কয়েকবার আশা যাওয়া করেন তখন আপনার মুখে ফুটে উঠা হাসি আমার মনে ভালোবাসার সঞ্চার
করিয়াছে বলে আমার ধারণা।

জানি আমার ভালোবাসা আপনার কাছে সামন্য মনে হইতেই পারে কিন্তু এই ভালোবাসা আমার অকাল মৃত্যুর কারণ না হলেও বুকের বা পাশের প্রচুর ব্যথার কারণ হইয়া দাঁড়াইবে।

আপনার নিকট বিনীতভাবে আকুল আবেদন আমার ভালোবাসা গ্রহণ করিয়া আমার মুখে হাসি ফুটাইয়া আমার ঘরে আসিয়া আমার বংশবৃদ্ধির কারণ হইবে।
অতএব আমি আমার এই চিঠিখানা বেনামি ডাকবাক্সে প্রেরণ করিয়া অপেক্ষা করিতেছিলাম। পনের দিন পরে এক নীল রঙের শাড়ি পরিয়া আমার দরজার সামনে হাতে একখানা বেগসহ হাজির হইয়াছেন অথৈ নামের ভদ্র এবং কড়া মেজাজের মেয়ে।
প্রশ্ন আসিতেই পারে যে আসিবামাত্র কেমন করিয়া তুমি বুঝিতে পারিলা যে সে কড়া মেজাজের মেয়ে?
সে, মানে অথৈ। সেই নামটাও জানিতাম না তাহাকেও আমরা কেহ চিনিতাম না। কেমন করিয়া চিঠি তার হাতে পৌঁছে গিয়াছে তাহাও বলিতে পারিবো না।
বাড়ীর সামনে আসিয়া নিজের নাম সম্মোধন করিয়া সে বলিতেছিল আমি অথৈ, আইসা পড়ছি।
এখন এটা আমার বাড়ী। কেউ কিছু বলার থাকলে আমার সামনে আসিয়া বলিতে পারেন।
তার এই উচ্চ স্বরের আওয়াজ শুনিতে পাইয়া রান্না ঘরে ডাল রান্না করা রাখিয়া আমার জননী যখন আসিলেন তার সামনে তখন সে বললেন আপনি কী অবকাশের মা?
আমার জননী মাথা নাড়িয়া জবাব দিলেন হ্যাঁ।

মাথাটা নত করিয়া সালাম করিয়া মা বলিয়া সে রান্না ঘরে গিয়া পিঁড়ির ওপর বসিয়া পড়িল।
এসব ঘটনা যখন ঘটেছে বাড়িতে তখন আমার জননী ছাড়া আর কেহ নাই।পাশের বাড়িতে থাকা আমার আদরের ছোট বোন শশী আসিয়া তাকে জড়িয়ে ধরিলেন মনে হইলো তারা তাদের খুব পরিচিতজন।

আমি কাহাকে চিঠি পাঠাইয়াছিলাম তাহা আমি নিজেও জানি না।আমি কোন নাম ও মেনশন করিয়া দেই নাই কিন্তু এই অথৈ নামের মেয়েটা ক্ষনিকের মাঝে যেন পুরো বাড়িটা দখল করিয়া নিয়াছে বলে মনে হচ্ছিল।

আমার জননী বেজাই খুশি। হাসিমাখা মুখে তার কার্যকলাপ খুবই মনভরে উপভোগ করিতেছিলেন।ইতিমধ্যে বাবা আসিয়া পড়িলেন বাজার থেকে।সন্ধ্যা নামিয়া আসিল পশ্চিমাকাশে।
সাইকেলের বেলটা বাজতে অথৈ বাড়ীর বাইরে গিয়ে বিশাল সালাম দিয়া আমার বাবাকে অভিবাদন জানালেন।
তখন সে নীল রঙের কামিজ পড়িয়াছিল।আমার বাবা টাহর করিতে পারিল না সে কে!
মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন হয়তো বা রাফিয়ার বান্ধবী হইবে।
মাগরিবের আজানের সাথে সাথে যখন ওযুর পানি আনিয়া বাবা বাবা বলে ডাকিয়া উঠিলেন আমার বাবা চোখ দু’টো আড় করিয়া কয়েকবার তার চেহারা দেখিয়া মুচকি হাসি দিয়া ওযুর পানি নিয়া ওযু করিয়া মসজিদে চলিয়া গেলেন।

আমি বাড়ীতে আসিতে আসিতে অথৈ বাড়ির ৭০ ভাগ মালিকানা দখল করিয়া নিয়েছেন বলে মনে হইতেছিল।
আমি যখন বাড়ীতে আসিয়া হাজির হইলাম ততক্ষণে বাড়ি ভর্তি মানুষ এসে হাজির হইলো আমার সহধর্মিণীকে দেখিবার জন্য। সবাই বলাবলি করেতিছিল মেয়েটা খুব নম্র ভদ্র ও খুবই চালাক মনে হয়।অবকাশ ঠকেনি।
আমি কিছুই জানি না এসবের কিন্তু এখন দেখিলাম পরিবারের সকলেই তাঁহাকে গ্রহণ করিয়া নিয়াছে। এমনকি এলাকার মানুষও গ্রহণ করিয়া নিয়াছে।
আমারও গ্রহণ করিতে আর কোন দ্বিধা রহিলো না।

চিঠিতে নামটা না লিখিয়া ভালোই করিয়াছিলাম মনে হইলো তাইতো আমি অথৈ এর মতো একজন মেয়ে পাইলাম।
রাত্রি যখন হইলো তখন আমার হাতে হাত রাখিয়া সজোরে কান্না করিয়া বলিতেছিলো আমি আপনারে অনেক ভালোবাসি।আপনি আমারে তাড়িয়ে দিয়েন না।আমি আমার বাহুতে আগলে রেখে তাকে বললাম আরে পাগলী আমিও তো ভালোবাসি।
সকালে ঘুম থেকে উঠিয়া আমাদের নতুন জীবনের শুরু করিলাম। বাবা কাজী সাহেবকে ডাকিয়া আনিয়া আমাদের বিবাহ পড়াইয়া দিলেন এবং আমার উপর তাহার পরিপূর্ণ অধিকার দিয়ে দিলেন।
আমাদের সুখের সংসার চলিতে লাগিল..।

লেখক: আরমান জিহাদ

ছড়াকার কবি ও প্রাবন্ধিক

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।