কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক মহাসড়কের বিক্ষিপ্ত স্থান এখন মরণ ফাঁদ? নিন্ম মানের কাজে ফলে অল্প দিনেই বেহাল দশা।।
কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক মহাসড়কের বেশ কিছু অংশে পুনঃমেরামতের অভাবে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। শুরু থেকেই কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন ছিলো। পাঁচ বছর যেতে না যেতেই রাস্তাটির বিক্ষিপ্ত স্থান এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কাজের মানের প্রশ্নে শুরু থেকেই জনরোষের সৃষ্টি হলেও কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে ফাটাল ও ভাঙ্গনের দেখা দেয়। ক্ষণে ক্ষণে গর্তেরও সৃষ্টি হয়। ফলে দূর্ঘটনার কবলে পড়েছে বিভিন্ন বাহন ও যাত্রীরা। রাস্তাটির পাশেই রাখা হচ্ছে শহরের সকল ময়লা আবর্জনা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হলেও প্রশাসন দেখেও দেখে না। অভিযোগ স্থানীয়দের।
কিশোরগঞ্জের হাওর বাসীকে রাজধানীর বুকে আসা যাওয়া করতে হয় কিশোরগঞ্জ টু ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক অতিক্রম করেই। তাছাড়া দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে জেলায় প্রবেশসহ হাওরের পর্যাটন এলাকাগুলোতে যেতে হলে আঞ্চলিক মহাসড়কটি পাড় হয়েই যেতে হয়। এই সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়ে গেছে নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকেই। সংস্কারের অভাবে বড় বড় যানবাহনের ভীরে ছোট ছোট যানবাহনকে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে ঝুঁকি নিয়েই। নিন্ম মানের কাজের ফলে ঝুঁকি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী এমন অভিযোগ সাধারণের। অধিক ভাঙ্গনের স্থানে ধীর গতিতে চলাচলের কারণে ডাকুদের ভয়ও থেকে যায় বলে জানান চালক ও যাত্রীরা।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী এলাকা থেকে শুরু করে বাজিতপুর, কটিয়াদী উপজেলা হয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার পুলের ঘাট এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার জায়গায় দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার নেই। নাম মাত্র যে সকাল ভাঙ্গা জায়গায় প্রলেপ দেয়া হয় তা তেমন একটা কাজে আসে না। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কের রাস্তাটির কাজ করা হলেও তদারকির অভাব থেকেই বিভিন্ন স্থানে এই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ ছিলো শুরু থেকেই। রাস্তাটির কোথাও কোথাও বড় ধরনের ফাটালের সৃষ্টি হয়ে উঁচু নিচু ভাঁজ এবং টিলাও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির মৌসুমে পানি জমা সময়ে থাকে রাস্তায়। এসব গর্তের পানিতে গাড়ীর চাকা পড়তেই ছোট গাড়ি হেলেদুলে ঘটায় ভয়ংকর দুর্ঘটনা। ইট বর্ণের পানিতে ছোট বাহনের যাত্রীদের জামাকাপড়ও অনেক সময়ে নোংরা হয়ে যায়। বিশেষ করে অপরিচিত মোটর সাইকেল আরোহীরাই বেশীরভাগ দূর্ঘটনার কবলে পড়ে এ সব গর্তে পড়ে। সাম্প্রতিক অসংখ্য প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে এই বেহাল দশার কারণে।
পিরোজপুর বাজারের মোটর সাইকেল মিস্ত্রী কামরুল ইসলাম জানান, প্রতিনিয়তই কুলিয়ারচর এবং কটিয়াদী এলাকার মাঝামাঝি এই সব ভাঙ্গা রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অসংখ্য আরোহীরা। আমার দোকানে প্রায়ই নিয়ে আসে এসব দূর্ঘটনায় ভাঙ্গা গাড়ী।
আশপাশের হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার আঞ্চলিক মহাসড়কের দূর্ঘটনার রোগীর সংখ্যা দিন দিন তুলনামূলক বেড়েই চলেছে। তবে ছোট গাড়ির আরোহীদের সংখ্যা বেশি।
কুলিয়ারচর উপজেলার দাড়িয়াকান্দি থেকে শুরু করে কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার জায়গার অবস্থা বেহাল বেশি খারাপ। এছাড়াও পুলের ঘাট এলাকা পর্যন্ত এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
বেশ কিছু জায়গায় চালকদেরকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মালবাহী ট্রাকসহ যাত্রীবাহী গাড়ি নিয়ে ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে। তাদের সাথে কথা হলে, এই ভাঙ্গা রাস্তার কারণে সীমাহীন কষ্ট এবং সময় ব্যয়ের কথা তুলে ধরেন। ১৫ মিনিটের রাস্তা পার হতে এক ঘন্টা সময় লেগে যায় বলেও জানান কুলিয়ারচর এলাকার ট্রাক চালক হুমায়ূন কবীরসহ অনেকেই। বাজরা হতে কটিয়াদী বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত খুব বেশী খারাপ বলেও জানান। এছাড়াও অগুনিত চালকের সাথে কথা হলে তারা তাদের সীমাহীন কষ্ট ও ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন।
কুলিয়ারচর বড় কান্দার সিএনজির যাত্রী সুরুজ মিয়া, স্থানীয় পিরোজপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিনয় মোদক, গোলাপ এবং কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকার মটর বাইক ব্যবসায়ী মামুন ও পথচারী আল আমিনসহ এ রাস্তা চলাচলকারী অসংখ্য লোকজনের সাথে কথা হলে মেরামতের অভাবে এই রাস্তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।
আঞ্চলিক মহাসড়কের এই ভোগান্তির পাশাপাশি সরেজমিনে দেখা গেছে কটিয়াদী পৌর এলাকায় মূল রাস্তার বিদ্যুৎ সাবষ্টেশন সংলগ্ন ভোগ পাড়ায় এবং কিশোরগঞ্জে জেলার সদরের মারিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়ায় মহাসড়কের সাথে ময়লার ভাগার, ময়লা আবর্জনা স্তুপ আকারে রাখার কারণে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয় যাত্রীদের ও পথচারীকে দীর্ঘ সময়। ভাঙ্গা রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে বমির দৃশ্য ও চোখে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর এই পরিবেশের সৃষ্টি হলেও প্রশাসন দেখেও দেখে না এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
কিশোরগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নাম্বার থেকে সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মতিন জানান তিনি এখন হেড অফিসে আছেন। দায়িত্বে থাকাদের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জের জেলা সড়ক ও জনপদের নির্বাহীর প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়াকে কয়েক দফায় ফোন করাসহ একাধিকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ ও ভৈরবের দায়িত্বরত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলীর মোঃ মাইদুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সম্ভবত ২০১৮-১৯ সালের কাজ। তাই এই মুহূর্তে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম ও এই সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে ৭/৮কিলোমিটার জায়গার বরাদ্দের বিষয়ে অনুমোদন হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দুই এক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। এ কাজ হলে জনগণের ভোগান্তির কিছুটা অবসান ঘটবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নিচ কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের রাস্তাটির ছবিগুলো কটিয়াদী চরিয়াকোনা এলাকার
পর ছবিটি কটিয়াদী পৌর এলাকার ভাঙ্গা রাস্তার পাশের ময়লার ভাগারের যা ভোগপাড়া এলাকার।