আমি নারী হিসেবে যুদ্ধে নেমেছি, দমে যাবো না, আমার এ যুদ্ধে সফল হতে বেশিদিন সময় লাগবে না। পুরুষ শাসিত সমাজে নারী হিসেবে আমিও পারি তা দেখিয়ে দিতে চাই এমনটিই বলছিলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার গচিহাটার একজন যুবতী ব্যবসায়ী কামরুন্নাহার। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্স পাস করে কামরুন্নাহার সরকারি-বেসরকারি চাকরির পেছনে না ছুঁটে তিনি গচিহাটা বাজারের পাশে ‘চুড়ুইভাতি’ নামে একটি রেস্তেরাঁ খুলে চুটিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, চড়ুইভাতি শব্দটাকে কিশোরগঞ্জে গ্রামীণ ভাষায় টুপাতি বলে। আমি রান্না-বান্নায় এক সময় অদক্ষ ছিলাম, বর্তমানে রান্নাকে আমি শিল্প হিসেবে নিয়েছি। রান্নায় একটা চলমান চরম আর্ট আছে। যা রান্নায় আসার আগে জানতাম না। এখনই নারী উদ্দ্যোক্তা হিসেবে সফল নিজেকে সফল মনে করি না। আমার মনে হচ্ছে এটা একটা যুদ্ধ। বর্তমানে দেশে নারী উদ্দ্যোক্তারা যে জায়গায় কাজ করছে আমি তাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমি যদি শহুরে হতাম তাহলে আমাকে মানুষজন সহজে গ্রহণ করতো। নারী না পুরুষ বিবেচনা করতো না। গ্রামের বাজারে রেস্তোরা দিয়ে ব্যবসা করছি সেটা একটা কঠিন যুদ্ধ। আমি দেশের কতক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের নিয়ে চড়ুইভাতি নামে রেস্তোরাটি চালাই। তারা আমার এখানে পার্টটাইম কাজ করে এবং স্বাচ্ছন্দতা অনুভব করে। আমার এখানে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন চলে আসে হায়দারাবাদের বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, নবাবী বিরিয়ানী, চিকেন বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, চালের রুটি আর গরুর গোস্ত, চিকেন মাসালা, চিকেন চাপ, চিনি চিকেন এবং আমার আবিষ্কার চৌচিলি ফিস খেতে। এছাড়াও সম্পূর্ণ ক্যামিকেল ছাড়াই লিচুর জুস, কাঁচা আমের জুস, তেতুঁলের জুস, লেবুর জুস, জিরাপানি, কোল্ডকফি বানায় তাও খেতে আসে। বাজারের প্রচলিত জুসের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যা মানবদেহের ক্ষতিকর নয়।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকে ব্যবসা করে নিজের আয়ের জন্য এবং সংস্থানের জন্য। আমি ব্যবসা করি আয়ের দিক বিবেচনা করে নয়। বিশ্বাস করি আমি কামরুন্নাহার যদি চুড়ুইভাতি নিয়ে দাঁড়াই তাহলে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়াবে। আর এ দাঁড়ানোর চিন্তা থেকে এ চুড়ুইভাতি উদ্ভাবন।
নারীদের উদ্দ্যেশে তিনি বলেন, আপনারা কাজ শুরু করেন। আপনার গৃহকর্তা দিনরাত কেটে মরছে আর আপনি রান্না-বান্নায় ব্যস্ত। আপনি রান্না-বান্নার পাশাপাশি যে কোন কাজ করেন। তারপর নিজের পরিচয় গড়ে তুলুন। আমাদের এলাকার শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা কাজের ব্যাপারে বিষম লজ্জাবোধ করে। সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।