নানা কারণে মাঠের বাইরে বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে সমালোচনার কমতি ছিলো না। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলের দুই পরাশক্তি ফাইনালে উঠে সেই সমালোচনাকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। সবাই এখন জমাট এক লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্ষন গুনছে।
অসুস্থতার কারনে ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ফাইনালের আগে অনুশীলনে যোগ দিতে না পারায় দুঃশ্চিন্তা রয়েছেন কোচ দিদিয়ের দেশ্যম। যে কারণে আজ ফাইনালের মহারণে শুরু থেকেই প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাতে চায় ফরাসিরা।
এই নিয়ে উভয় দলই তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা নিশ্চিতের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। চার বছর আগে রাশিয়াতে শিরোপা হাতে পাওয়ার পর টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠেছে লেস ব্লুজরা। এর আগে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের কাছে রাখার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ব্রাজিল। এছাড়া দেশ্যমের সামনেও সুযোগ একই দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের। ১৯৩৮ সালে ইতালির কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জো এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
কাতার বিশ্বকাপের শুরু থেকে শিরোপা জয়ের জন্য ফেভারিট হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স। আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপের শিরোপাটা এখানো অধরা রয়ে গেছে। সে কারণেই বিশ্বকাপের শিরোপা হাতে তোলার শেষ সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইবে না টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এলএম টেন।
অন্যদিকে, ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের এই মুহূর্তের সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেও দলকে সাফল্য এনে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
২০১৪ সালের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হারের ক্ষত এখনো মানসিকভাবে পীড়া দেয় মেসিকে। সেই পরাজয় থেকে বেরিয়ে আট বছর পর আরো একটি ফাইনালে মেসি আর কোন সুযোগ নষ্ট করতে চায়না। ইতোমধ্যে পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার মেসি টুর্নামেন্ট সেরার দৌঁড়েও অনেকখানি এগিয়ে রয়েছেন।
সতীর্থদের বেশ কিছু বলের যোগান দিয়ে অ্যাসিস্টের দিক থেকেও মেসি নিজেকে এবারের আসরে অনন্য করে তুলেছেন। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার জয়ে দিয়েগো ম্যারাডোনা যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেসির সামনেও সেই কৃতিত্ব অর্জনের শেষ সুযোগ রয়েছে।
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ৩-০ গোলের জয়ের পর মেসি বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বকাপটা দারুণ উপভোগ করছি। এবারের বিশ্বকাপ আমার কাছে বিশেষ কিছু।’
তবে এবারের আসরটি কি মেসির টুর্নামেন্ট হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে নাকি ফ্রান্স আবারো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিবে, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজ রাতেই।
লেস ব্লুজরা এবারের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ঠিকই, কিন্তু সব ম্যাচে তারা নিজেদের যোগ্যতার পূর্ণ প্রমাণ দিতে পারেনি। তার উপর এই মুহূর্তে দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অসুস্থ হওয়ায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে ও ইব্রাহিমা কোনাতেসহ কিংসলে কোম্যানও ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় শুক্রবার অনুশীলনের বাইরে ছিলেন।
সেমিফাইনালে মরক্কোর সঙ্গে ডায়ট উপামেকানোর স্থানে খেলেছেন কোনাতে। উপামেকানোর অসুস্থতার কারণে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। ঐ ম্যাচে আদ্রিয়েন রাবিওত খুব একটা স্বস্তিবোধ না করায় পুরো স্কোয়াডের বাইরে ছিলেন। যদিও একটি খেলোয়াড়কে ফ্রান্স কখনোই মিস করতে চাইবে না, তিনি হলেন এমবাপ্পে। ৪ ম্যচে ৫ গোল করা এই তারকা ইংল্যান্ড ও মরক্কোর বিরুদ্ধে কোন গোল করতে না পারলেও পুরো ম্যাচেই ছিলেন দুর্দান্ত। চার বছর আগে টিনেজার এমবাপ্পের কল্যাণেই ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে শিরোপা ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। ঐ আসরে শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করার ক্ষেত্রেও এমবাপ্পের ভূমিকা ছিল অনবদ্য।
পুরো বিশ্ব তাকিয়ে আছে কাতারে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামের দিকে।কার মুখে হাসি আর বিজয়ের মালা উঠবে খেলা শেষে তা প্রমাণ হবে। কেউ কারো থেকে কোন অংশে কম নয়।